রনী দে

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য “মেজবান”~রনী দে, পেশায় ফটো সাংবাদিক

চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ। নানা উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নে মেজবানির আয়োজন এখানকার সংস্কৃতির অংশ।ঐতিহ্যবাহী মেজবান আদিকাল থেকেই প্রচলিত। ১৫শ’ শতকের কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ কাব্যগ্রন্থে এ মেজবানির তথ্য মেলে। ১৬শ’ শতাব্দীর সৈয়দ সুলতানের নবীবংশ কাব্যগ্রন্থে ‘মেজোয়ানি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ভোজনার্থে। প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে মেজোয়ানি ও মেজবান শব্দ দুটি পাওয়া যায়। মেজবান ফার্সি শব্দ । মেজবান শব্দটির অর্থ অতিথিআপ্যায়নকারী । আর মেজবানি শব্দের অর্থ আতিথেয়তা বা মেহেমানদারী । চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মেজবানকে বলা হয় ‘মেজ্জানি’। চট্টগ্রামের বাইরে অন্য জেলায় একে বলা হয় ‘জেয়াফত’। মেজবান সাধারণত কারো মৃত্যুবার্ষিকী, কুলখানি, চল্লিশা, ওরশ, মিলাদ মাহফিল, আকিকা, গায়ে হলুদ, বিয়ে, নতুন বাড়িতে উঠা, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু তথা কোন কাজের শুভ সূচনার সময় আয়োজন করা হয় ।মেজবানে যেসব খাবার পরিবেশন করা হয় সেগুলো অসাধারণ সুস্বাদু হয় । আর এ কারণেই মেজবানের খাবারের প্রতি সবার আলাদা আকর্ষণ থাকে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার আকর্ষণ থাকে এ খাবারের প্রতি । কোথাও কোনো মেজবান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে বেশ আগ্রহের সাথে সেখানে শরিক হন সবাই। মজাদার সুস্বাদু গরুর গোশত ও গোশত দিয়ে রান্না উপাদেয় খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন অতিথিরা। মূলত গরু জবাই করে মেজবানির আয়োজন করা হয়। তবে কখনো আবার গরুর সাথে মহিষ, গয়াল এবং খাসিও জবাই করা হয়। মেজবানে গরুর গোশত দিয়ে নানা পদের খাবার তৈরি হয়ে থাকে। রান্না করা গরুর গোশত, চনার ডাল, গরুর নলা, মাষকলাই ডাল, গরুর গোশতের কালো ভুনা পরিবেশন করা হয় মেজবানিতে । মোটা চালের গরম ভাতের সাথে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম গোশত পরিবেশন করা হয় এ আয়োজনে ।প্রাচীনকালে মেজবানির খাবার পরিবেশন হতো মাটির বাসনে । অতিথিরা মাঠে কিংবা উঠানে পাটি বিছিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে বসতেন । মেজবানের দিন সকালে গরু জবাই করে বাবুর্চিরা সারি সারি ডেকচিতে মেজবানী গরুর মাংস রান্না করেন। মাংস রন্ধন প্রক্রিয়ায় কি কি মশলা ব্যবহার করা হয় তা একমাত্র বাবুর্চি জানেন।সাধারনত ২২ প্রকারের মসলা এতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত রন্ধনের স্বাদের অকৃত্রিমতা রক্ষায় আসল মসলাগুলোর কথা তিনি তারা কাউকে জানান না। চট্টগ্রামের মেজবান গুলো সাধারণত দুপুরে আয়োজন করা হয় ।

শেরার করুন